ঢাকা | , ১২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শার্শা সরকারি মহিলা কলেজ ও “আমরা নারী”-এর যৌথ উদ্যোগে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত

Staff Reporter
নিউজ প্রকাশের তারিখ : Oct 22, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন: ছবির ক্যাপশন:
ad728

অক্টোবর মাস বিশ্বব্যাপী “পিঙ্ক মান্থ” বা স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস হিসেবে পালিত হয়। এই উপলক্ষে আজ ২১ অক্টোবর ২০২৫, যশোর জেলার শার্শা উপজেলা প্রশাসন, শার্শা সরকারি মহিলা কলেজ, “আমরা নারী” এবং এর সহযোগী সংগঠন “আমরা নারী রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট”-এর যৌথ উদ্যোগে কলেজ অডিটোরিয়ামে একটি সেমিনার ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ক্যান্সার সার্জন ও বিশেষজ্ঞ ডা. বনি আমিন।
বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শার্শা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নিয়াজ মাখদুম। তিনি বলেন, “স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি হলো সচেতনতা, সময়মতো পরীক্ষা ও নিজের প্রতি যত্নশীল মনোভাব। প্রতিটি নারী যদি নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হন, তাহলে শুধু তিনিই নন, তার পরিবার, সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মও উপকৃত হবে। সময়মতো সনাক্তকরণ, চিকিৎসা গ্রহণ এবং ইতিবাচক মনোভাবই জীবন রক্ষার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।”
সেমিনারে উপস্থিত অধ্যক্ষ প্রফেসর লায়লা আফরোজা বলেন, “আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতার এই শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে হবে। সমাজকে ক্যান্সারমুক্ত করতে হলে এই সচেতনতা থেকে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।”
“আমরা নারী”-এর নির্বাহী সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আমরা নারী’র এই উদ্যোগ শুধু একটি সংগঠনের কাজ নয়, বরং একটি অনুপ্রেরণা। আমরা প্রত্যেকে যদি সচেতনতার দূত হয়ে এগিয়ে আসি, তাহলে ক্যান্সারমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।”
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়কারী এম এম জাহিদুর রহমান (বিপ্লব) বলেন, “আমরা নারী একটি অরাজনৈতিক ও অলাভজনক সামাজিক সংগঠন, যা নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্যসুরক্ষা, শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘আমরা নারী রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ নারীর অধিকার, স্বাস্থ্য, নিরাপদ খাদ্য, শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে গবেষণাভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আমাদের লক্ষ্য হলো প্রতিটি শিক্ষার্থীকে স্তন ক্যান্সার সচেতনতার দূত বা ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবে গড়ে তোলা— যাতে তারা সমাজে সচেতনতার আলো ছড়িয়ে দিতে পারে।”
গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ১৩,০০০ নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি রোগী প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত না হওয়ার কারণে মারা যান। দেশের মোট ক্যান্সার রোগীর প্রায় এক-ষষ্ঠাংশই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। নিয়মিত আত্মপরীক্ষা, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই মৃত্যুহার অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
বিশেষজ্ঞ ডা. বনি আমিনের বক্তব্যের সারাংশ:
স্তন ক্যান্সার: সচেতনতা ও প্রাথমিক প্রতিরোধই সবচেয়ে বড় সুরক্ষা; স্তন ক্যান্সার নারীর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার অন্যতম বড় প্রতিবন্ধক। এটি তখন তৈরি হয়, যখন স্তনের কোষগুলো স্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রক্রিয়া হারিয়ে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে এবং একসময় টিউমারে রূপ নেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এই পরিবর্তন চোখে ধরা না পড়লেও সচেতনতা ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা থাকলে সহজেই শনাক্ত করা যায়।
স্তন ক্যান্সারের দুটি ধাপ:
প্রাথমিক বা সীমাবদ্ধ ধাপ (Non-invasive stage): এই পর্যায়ে ক্যান্সার কোষ স্তনের ভেতরে সীমাবদ্ধ থাকে। চিকিৎসা নিলে প্রায় শতভাগ রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন।
পরবর্তী বা বিস্তৃত ধাপ (Invasive stage): এ পর্যায়ে ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে, ফলে চিকিৎসা জটিল হয়ে যায়।
ঝুঁকির কারণসমূহ:
বয়সের অগ্রগতি, বংশগত ইতিহাস, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ ও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা— এসব কারণে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। তবে জীবনযাপনে সামান্য পরিবর্তন, নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাবার ও ধূমপান-মদ্যপান পরিহার করলে ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো যায়।
সতর্কতার লক্ষণ:
স্তনে নতুন কোনো গুটি বা শক্তভাব, ত্বকে কুঁচকানো, বোঁটা থেকে স্রাব, বোঁটা ভেতরে ঢুকে যাওয়া বা স্তনের আকারে পরিবর্তন— এগুলো হতে পারে প্রাথমিক সতর্ক সংকেত। এসব দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
পরীক্ষা ও চিকিৎসা:
স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ে ম্যামোগ্রাম, আল্ট্রাসনোগ্রাফি ও বায়োপসি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি। প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত হলে চিকিৎসার সফলতা প্রায় শতভাগ। বর্তমানে সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, হরমোন থেরাপি ও আধুনিক ইমিউনোথেরাপির মাধ্যমে এই রোগ কার্যকরভাবে নিরাময় সম্ভব।
স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের মূলমন্ত্র হলো সচেতনতা, সময়মতো পরীক্ষা ও নিজের প্রতি যত্নশীলতা। প্রতিটি নারী যদি নিজের স্বাস্থ্য সচেতনতার অভ্যাস গড়ে তোলেন, তবে একটি সুস্থ, সচেতন ও ক্যান্সারমুক্ত সমাজ গঠন করা সম্ভব।

নিউজটি পোস্ট করেছেন : Staff Reporter

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ